ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিকে গোপন বন্দিশালায় বছরের পর বছর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় নেত্র নিউজ নামের একটি নিউজ পোর্টালে। ২০২২ সালেও ওই প্রতিবেদনে গোপন বন্দিশালাকে ‘আয়নাঘর’ নামে অবহিত করা হয়। প্রতিবেদনটি যখন প্রকাশ করা হয় আওয়ামী লীগ দলটি বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলো। তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) এর মাধ্যমে এই ‘আয়নাঘর’ পরিচালনা করতো বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। একটি শিক্ষার্থী আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সম্মিলিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর একেএকে বের হয়ে আসতে থাকেন ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকা অনেকে। যাদের মধ্যে অন্যতম মীর আহমদ বিন কাসেম, যিনি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর সন্তান। অন্যজন- আবদুল্লাহিল আমান আজমি, যিনি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযমের সন্তান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলো গোলাম আযম তাদের প্রধান ছিলেন।
নির্বিচারে কোনো ব্যক্তিকে গুম করে বছরের পর বছর বন্দি করে রাখা নিঃসন্দেহে একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল। আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের বাহিনীকর্তৃক ‘আয়নাঘরের’ মতো কোনো অপরাধ সংগঠিত করে থাকলে এর সঠিক বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ন্যায়বিচার শুধু অভিযোগ এবং নিউজে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে হয় না। ন্যায়বিচারের জন্য সাক্ষ্য-প্রমাণ জরুরি। আওয়ামী সরকারের পতনের পর একে একে যখন ‘আয়নাঘরে’ থাকা বন্দিরা জনসম্মুখে বেরিয়ে আসতে লাগলেন, তখন দেশের মানুষ ভেবেছিলো আয়নাঘর নিশ্চই এবার সবার সামনে প্রকাশিত হবে। যদিও জনসম্মুখে এসে যারা নিজেদের ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকার দাবি করেছেন তাদের কাউকে ‘আয়নাঘর’ থেকে উদ্ধার করা হয়নি। আচমকা তারা মিডিয়া এবং জনতার সামনে এসে হাজির হলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর ড. ইউনূসের আশার বাণী শুনে দেশের মানুষ ভেবেছিলো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন যতো গড়ালো, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্গলা, শিক্ষাঙ্গন এবং বাণিজ্যসহ সবকিছু আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠলো। এরই মধ্যে একদিন আয়না ঘরের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করা হলো, যেখানে দেখা গেলো সম্পূর্ণ নতুন একটি কয়েদি খানা। ‘আয়নাঘরের’ ছবি নিয়ে দেশজুড়ে এবং অনলাইনে বিতর্ক শুরু হয়। দেশের মানুষ তখন প্রকৃত ‘আয়নাঘর’ প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলতে লাগলো। অনেকেই অভিযোগ করছিলেন- ইউনূস সরকার ‘আয়নাঘর’ প্রস্তুত করছে, তাই এটি জনগণের সামনে প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ‘আয়নাঘর’ দেখার অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হলে থাকলো।
অপেক্ষার প্রায় ৬ মাস পর ইউনূস সরকার ‘আয়নাঘর’ বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে এলেন। ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বেশ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে আলোচিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলেন। এর মধ্যদিয়ে আমরা অবশেষে কুখ্যাত ‘আয়নাঘরের’ দেখা পেলাম। ‘আয়নাঘরের’ ছবি-ভিডিও প্রকাশের পর দ্রুতই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুরু হয় এ নিয়ে নান তর্ক-বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে এই ‘আয়নাঘর’ প্রকৃত ‘আয়নাঘর’ নয়। বন্দী থাকা ব্যক্তিদের বয়ানের সাথে এই ‘আয়নাঘরের’ মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অনেক বিতর্ক শুরু হয়েছে ‘আয়নাঘরকে’ ঘিরে। এই আর্টিক্যালে আমরা ‘আয়নাঘর’ এর প্রকাশিত ছবি, পারিপার্শ্বিক বিশ্লেষণ ও বিতর্কগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
‘আয়নাঘরে’ বন্দীরা কিভাবে উদ্ধার হলেন?
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বছরের পর বছর ‘আয়নাঘরে’ বন্দী থাকা একাধিক ব্যক্তি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলেন। প্রকাশ্যে এসে দাবি করলেন- তারা এতোদিন ‘আয়নাঘরে’ বন্দী ছিলেন। দীর্ঘ গুম বা বন্দীদশার পর মুক্ত অবস্থায় সবপ্রথম তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে নিজের বাসায়। কারো কারো ক্ষেত্রে অনলাইনে পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়েছে মুক্তির কথা। ‘আয়নাঘরের’ মতো একটি কুখ্যাত ও গোপন বন্দীশালা থেকে এতো দ্রুত ও সহজে তারা কিভাবে মুক্ত হলেন? মুক্ত হয়ে ফিরে আসা ব্যক্তিদের কারা উদ্ধার করলো? কিভাবে ‘আয়নাঘর’ খুঁজে পাওয়া গেলো? বন্দীথাকা ব্যাক্তিদের গোপনে উদ্ধার করা হলো কেনো? উদ্ধারের সময় ‘আয়নাঘর’ ও তাদের উদ্ধারের দৃশ্য কেনো জনগণের সামনে প্রকাশ করা হলো না? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেয়ে জনমনে আশংকা তৈরি হয়েছে- বন্দীরা এতোদিন আত্মগোপনে ছিলো নাতো? ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা আত্মগোপনে থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার পতনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছিলো নাতো? তারা কি আদৌ ‘আয়নাঘরে’ বন্দী ছিলেন, নাকী তারা আসলে মুক্তই ছিলেন?
৬ মাসের বেশি বিলম্ব
আওয়ামী লীগ সরকার ভাঙনের পর থেকে সর্বমহলে ‘আয়নারঘর’ জনসম্মুখে আনার দাবি উঠতে থাকে। কিন্তু, জনগণের সামনে ‘আয়নাঘর’ প্রকাশের ক্ষেত্রে ইউনূস সরকারের তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। কথিত ‘আয়নাঘরে’ ঘরে যারা বন্দী ছিলেন তারা কি অন্যায় বন্দীদশার বিচারের অধিকার রাখে না? দ্রুত প্রতিবেদন, তদন্ত ও অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। এমন পরিস্থিতে দেশের অনেক নাগরিক দাবি করেন- ইউনূস সরকার তাদের পছন্দমতো ‘আয়নাঘর’ নির্মাণ করছেন। যার ফলে এতো বিলম্ব এবং গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। ‘আয়নাঘরের’ প্রথম যে ছবিটি প্রকাশিত হয় সেখানে দেখা যায় একটি ঝকঝকে চকচকে নতুন হাজতখানা। ওই ছবি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে চুপ হয়ে ইউনূস সরকারে থাকা উপদেষ্টা ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একটি টিম নিয়ে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেন। তার এই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনের পর সর্বমহলে ব্যাপক সমালোচনা এবং প্রশ্নের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমরা আলোচনার সেদিকেই যাচ্ছি।
বিতর্কিত পরিদর্শন টিম, ছিলো না কোনো সাংবাদিক
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কথিত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শনে গেলেন সেই টিম নিয়ে সমালোচনা ও নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেসকল সাংবাদিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট দীর্ঘবছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একটি ‘আয়নাঘরের’ অভিযোগ করে আসছিলো এবং এটির সন্ধানের বিষয়ে কাজ করেছে তাদেরকে পরিদর্শন টিমে জায়গা দেয়নি ইউনূসের সরকার। ফলে, টিমের সদস্য হতে না পেরে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার এই পরিদর্শন টিমে বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ার সাংবাদিকদের রাখা হয়নি। এমনকী ছিলো না আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কোনো সাংবাদিকও! পৃথিবীর একটি মাত্র মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ‘নেত্র নিউজ’ যারা প্রথম ‘আয়নাঘরের’ অস্তিত্বের দাবি তোলে শুধু তারাই ছিলো মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গী। প্রদান উপদেষ্টার সাথে পরিদর্শনে যাওয়ার আশা করেছিলেন বন্দী থাকা অনেকের পরিবারের সদস্যরা। তাদেরকেও নেওয়া হয়নি। যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তারা ‘আয়নাঘরের’ মতো একটি স্পর্শকাতর জায়গায় হাস্যোজ্জ্বল সেলফি তুলেছেন, মডেলিং ছবি তুলেছেন, টিকটকের মতো ভিডিও করেছেন। কথিত ‘আয়নাঘরে’ ইউনূস এবং তার টিমের এমন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
‘আয়নাঘরের’ অবকাঠামো নিয়ে বিতর্ক
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আয়নাঘরের’ ছবি প্রকাশের পর শুরু তুমুল বিতর্ক। প্রধান কারণ- বন্দীরা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে যেমন বর্ণনা দিয়েছিলেন তার সাথে প্রকাশিত ‘আয়নাঘরের’ মিল নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধী এবং রাজাকার গোলাম আযমের সন্তান আবদুল্লাহিল আমান আজমির বর্ণনা অনুযায়ী ‘আয়নাঘরে’ তার রুম থেকে টয়লেট ছিলো অনেক দূরে। কিন্তু প্রকাশিত ‘আয়নাঘরের’ ছবিতে দেখা যায় রুমের মধ্যেই হাই কমোড! এছাড়া, অন্য বন্দীদের বয়ান অনুযায়ী গোলাম আযমের পুত্র আবদুল্লাহিল আমান আজমি এসি রুমে বিশেষ সুব্যবস্থায় ছিলেন। এক বন্দীর সাথে অন্য বন্দীর বর্ণনায় মিল না থাকায় বিতর্ক শুরু হয় ‘আয়নাঘর’ নিয়ে।
প্রকাশিত ‘আয়নাঘরের’ বিভিন্ন কক্ষগুলোতে দেখা যায় দেয়ালে বেশ বড়সড় ফাঁকা অংশ রয়েছে। যেটি দিয়ে অনায়াসে পালানো সম্ভব। ফলে, প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বন্দীরা পালালেন না কেনো? এছাড়া কিছু কক্ষে বেডের পাশেই দেখা যাচ্ছে কাঁচের জানালা। জানালার কাঁচ ভেঙে বন্দীরা চিৎকার করার চেষ্টা করেনি কেনো? সবগুলো কাঁচই অক্ষত! এছাড়া, কেউ যদি কাউকে বন্দী করে রাখতে চায়, কাঁচযুক্ত জানালার সম্বলিত কক্ষে কেনো রাখবে? এর পেছনে কোনো যুক্তি কি খুঁজে পাওয়া যায়?
একটি বড় কক্ষের দেয়ালে থাকে থাকে তাকের দাগ পড়েছে। দেয়ালের দাগ দেখে অনুমান করা যায় এখানে অনেকগুলো তাক বা শোকেসের মতো কিছু একটা ছিলো। যা এখন অপসারণ করা হয়েছে। কথিত ‘আয়নাঘর’ যেখানে দিনের পর দিন মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, সেখানে তাক কিংবা শোকেসের প্রয়োজন হলো কেনো? আপাতদৃষ্টিতে এই কক্ষটিকে কোনো গুদামঘর বলেই মনে হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরেকটি কক্ষ পরিদর্শন করেন যেখানে দেখা যায় কক্ষের থাই ডেকোরেশন করা হয়েছে এবং কক্ষটির উপরে টিনের চালা। কক্ষটির দিকে তাকালেই বুঝা যায় এটি কোনো পণ্যের শো-রুম বা অফিস ছিলো। টিনের চালার নিচে ডেকোরেশন করে রুমটির সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছিলো এবং এটিকে এসি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করা হয়েছিলো। কক্ষটির দেয়ালে তাকালে দেখা যায় ইটের গাঁথুনি জানালা বন্ধ করা হয়েছে এসি ব্যবহার করার জন্য। এরকম একটি কক্ষে কাউকে বন্দী করা সম্ভব? বন্দীদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা একটি ছোট কক্ষে বন্দী ছিলেন কিন্তু হাত-পা বা চোখ-মুখ বাঁধা ছিলো এমন বক্তব্য কোনো বন্দী দেননি। তাহলে এমন একটি কক্ষে যখন কেউ বন্দী ছিলেন তিনি চালার টিন ভেঙে পালালেন না কেনো? কেনোই বা চিৎকার করে লোক জড়ো করলেন না?
প্রকাশিত প্রতিটি রুমের দেয়ালগুলো ছিলো পরিষ্কার। সাধারণত বন্দীরা কক্ষের দেয়ালে নখ এবং অন্যান্য বস্তু দিয়ে দাগ কাটেন। ছবি আঁকার চেষ্টা করে,কেউবা নানান কথা লিখেন। কিন্তু যে ‘আয়নাঘরের’ ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেখানের দেয়ালগুলো ছিলো নতুনের মতো। কক্ষগুলোতে কেউ বছরের পর বছর বসবাসের কোনো ছাপ কক্ষের দেয়ালে পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া কিছু কক্ষে সিলিং ফ্যান দেখা গেছে। বন্দীশালায় কখনোই সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা হয় না। কারণ এই ফ্যানের সাথে ঝুলে বন্দী আত্ম*হ*ত্যা করতে পারে। একটি বাথরুমের ছবি ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় একটি নতুন টাওয়েল ঝুলছে। যা বন্দীশালাটির বিষয়ে বিতর্কে তেল ঢেলে দিয়েছে।
কথিত ‘আয়নাঘরের’ সামনের কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ এর বোর্ড লাগানো আছে। প্রকাশিত কক্ষের পরিবেশ দেখলে পরিবেশটা অনেকটা করোনা আইসোলেশন সেন্টারের মতোই লাগে। করোনা মহামারির সময়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেরকম একটি পরিত্যক্ত করোনা আইসোলেশন সেন্টারকে ‘আয়নাঘর’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে নাতো?
আলোচিত ও সমালোচিত সেই চেয়ার
পরিদর্শন টিমের অনেক সদস্য একটি স্টিলের তৈরি চেয়ারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। তাদের পোস্টের তথ্যানুযায়ী এটি একটি ইলেকট্রিক শক দেয়ার চেয়ার। যেটি ‘আয়নাঘর’ থেকে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণে জানা গেলো এটি কোনো ইলেকট্রিক শক দেয়ার চেয়ার নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে চেয়ারটিকে ইলেকট্রিক স্পিনিং চেয়ার বলেও দাবি করেছেন। প্রথমে দাবি করা হয়েছিলো এই চেয়ারে বসিয়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো। পরে দাবি করা হয় শক নয়, এই চেয়ারে বসিয়ে ঘোরানো হতো। ‘আয়নাঘরের’ ইতিহাস মিনিটে মিনিটে বদলাতে লাগলো।
একটি ভিডিও লিকের মধ্যদিয়ে চেয়ারটি সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যরসে পরিণত হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি কারখানায় চেয়ারটিতে বসে এটি ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা চেক করা হচ্ছে। সেখানে ইউনূস সরকারের প্রতিনিধি, পুলিশ ও অজ্ঞাত কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারটি আদৌ কথিত ‘আয়নাঘরে’ ছিলো, নাকি কারখানা থেকে বানিয়ে ‘আয়নাঘরে’ রাখা হয়েছে তা নিয়ে হইচই শুরু হয়।
ক্রাইম সিনে গণপ্রবেশ, আলামত নষ্ট
বর্তমান বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দলবল নিয়ে বাঁধাহীনভাবে ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলেন। অথচ, এই ‘আয়নাঘরে’ একাধিক ব্যক্তিকে বন্দী ও নির্যাতনের দাবি করা হচ্ছে। এই দাবি যদি সত্যি হয়, ‘আয়নাঘর’ একটি ক্রাইম সিন হিসেবে বিবেচিত। একটি ক্রাইম সিনে কি করে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে গণহারে প্রবেশ করা যায়? পরিদর্শক টিমের সদস্যরা ক্রাইম সিনে থাকা আলামতেও উপর বসেছেন, হেঁটেছেন, হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন। ফলে, ‘আয়নাঘরে’ তদন্ত ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো সত্যানুসন্ধানের কোনো সুযোগ আর নেই। ‘আয়নাঘরে’ যা কিছু আলামত ছিলো সব অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও তার দলবল ধ্বংস করেছেন।
কাউকে দিনের পর দিন বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা ও নির্যাতন চালানো জঘন্যতম একটি অপরাধ। বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ যদি সত্যিই এমন কোনো অপরাধ করে থাকে, এর জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়া জরুরি। কিন্তু বিপরীতে বন্দীদের বয়ান, আয়নাঘরের উপস্থাপন অভিযোগটিকে হালকা করেছে। ‘আয়নাঘর’ সত্যি হলেও এর তদন্ত এবং বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে ‘আয়নাঘর’ এর বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। সাধারণ মানুষ দাবি করছেন আওয়ামী লীগ পরাস্ত করতেই ‘আয়নাঘরের’ মতো নাটকের উপস্থাপন করছেন ইউনূসের অন্তবর্তীকালীন সরকার।